সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় গত দুই সপ্তাহে এলএসডিতে (লাম্পিং স্কিন ডিজিজ) আক্রান্ত হয়ে অর্ধশতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। তিন মাস ধরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে স্বীকার করলেও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ গবাদি পশুর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য জানে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে সুনামগঞ্জে গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত রোগ এলএসডি পাওয়া যায়। ভারত থেকে আসা গবাদি পশু থেকেই এই রোগ প্রথমবারের মতো হাওর এলাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়েছে। আফ্রিকা, ইথিওপিয়া, সুদানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এই রোগ কয়েক বছর আগে ভারতে দেখা দেয়। বাংলাদেশে এর আগে এই রোগ ছিল না। ভারত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেসব গবাদি পশু বাংলাদেশে ঢুকছে তা থেকেই এই রোগ বাংলাদেশের গবাদি পশুতে ছড়ায়। সুনামগঞ্জে এ পর্যন্ত আট হাজার ৫৫টি গরু এলএসডি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আক্রান্ত এলাকা দিরাই শাল্লার কৃষকরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁদের গবাদি পশুগুলো মারা গেলেও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে কোনো খোঁজ নেয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা গ্রাম্য গবাদি পশু চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা নিয়েও আক্রান্ত গবাদি পশু বাঁচাতে পারেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গবাদি পশুর দুই পায়ের মধ্যখানে সিনায় ফোস্কা দেখা দেয়। পরে সেখানে পানি জমে গরুগুলো মারা যায়। জিহ্বায়ও ফোস্কা দেখা দেয়। তখন অবিরত লালা ঝরে। তা ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কায় পানি জমে একসময় নিস্তেজ হয়ে মারা যায় গবাদি পশুগুলো। নতুন এই রোগ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।
জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শাল্লা উপজেলার উজানগাঁও গ্রামের গফুর মিয়া, বাবুল মিয়া, চান মিয়া, সিরাজ মিয়াসহ একাধিক কৃষকের গরু মারা গেছে। তা ছাড়া পাশের শর্মা গ্রামের আব্দুর রশিদ, পেরুয়া গ্রামের অমরচান, ব্রজেন্দ্রদাহ, শ্যামারচর মুক্তিযোদ্ধা কুলসুম বিবি, হরিধন দাস, এরশাদ মিয়া ও আব্দুর রহমানের কয়েকটি গরু কয়েক দিন আগে মারা গেছে।
পেরুয়া গ্রামের কৃষক নেতা অমরচান দাস বলেন, ‘আমাদের হাওরে বিভিন্ন সময়ে ক্ষুরারোগে গরু মারা গেছে। কিন্তু এ বছর যে রোগ দেখা দিয়েছে, অতীতে আমরা তা কখনো দেখিনি। আমার একটি গরু মারা গেছে গত শুক্রবার। গরুর সিনায় কয়েক দিন আগে বড় ফোস্কা দেখা দেয়। পরে সেখানে পানি জমে। শুক্রবার মারাই গেছে। শুধু আমার নয়, এলাকার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৫০ জন কৃষকের গরু মারা গেছে। করোনাভাইরাসের এই সময় গরুতে ভাইরাসজনিত এই রোগ দেখা দেওয়ায় কৃষকরা বেশি আতঙ্কিত।’
উজানগাঁও গ্রামের কৃষক গফুর মিয়া বলেন, ‘নতুন এই রোগে আমারও একটি গরু মারা গেছে। গরুর শরীরে বড় বড় ফোস্কা। পরে জিহ্বা দিয়ে অনবরত লালা পড়েছে। আমরা অতীতে গরুর এমন রোগ দেখিনি। এ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত থাকলেও পশু অফিসের লোকজনের কোনো খবর নেই।’
শ্যামারচর বাজারের গবাদি পশু চিকিৎসক মো. ময়না মিয়া বলেন, ‘গরুর এই রোগ আগে কখনো দেখিনি। প্রতিদিনই সিনায় বা রানে ফোস্কা ও পানি নিয়ে আক্রান্ত একাধিক গরু নিয়ে আসছেন কৃষকরা। চিকিৎসা দিলে অনেক গরুই ভালো হয়ে যাচ্ছে। তবে কয়েকটি গরু মারাও গেছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘গত অক্টোবরে প্রথমবারের মতো আমাদের সুনামগঞ্জে এলএসডি ভাইরাস রোগ দেখা দেয়। মূলত ভারত থেকে যেসব গরু দেশে আসছে, তা থেকেই ছড়িয়েছে এই রোগ। আমাদের দেশে এই রোগ অতীতে ছিল না। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। হাওরাঞ্চলে এই রোগে গরু মারা গেছে কি না তা আমাদের রেকর্ডে নেই। তা ছাড়া ক্ষুরারোগেও গরু মারা যেতে পারে।’
সূত্রঃ কালেরকন্ঠ